স্কুল লাইফে যখন সবাই সায়েন্স আর কমার্স নিয়ে ব্যস্ত। আমি চুপচাপ একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম। আমি আর্টস নিয়ে পড়বো। অনেকে অবাক হয়েছিলো, কেউ কেউ খোঁটা দিয়েছিলো। আবার কেউ মুচকি হেসে বলেছিলো, ভালো কিছু তো করতে পারবি না ভাই!
তবে আজ, যখন জীবনে একের পর এক ভালো চাকরি করেছি, নিজের জায়গা তৈরি করেছি। তখন বুঝি, আর্টস মানেই সীমাবদ্ধতা নয়। বরং, এটা একটা বিশাল দিগন্ত।

চলুন তাহলে খোলাখুলি আলাপ করি। আর্টস নিয়ে পড়লে কী হওয়া যায়, কী কী সুবিধা, আর শুরু করার আগে কী ভাবা উচিত?

📚 আর্টস কি শুধুই সহজ বিষয়?

প্রথমেই বলি, একটা ভুল ধারণা দূর করি।
অনেকেই ভাবে, “আর্টস মানে সহজ সাবজেক্ট, পড়তে কষ্ট কম।”
সত্যি বলতে, আর্টস পড়া সহজ। যদি আপনার সত্যিকারের আগ্রহ থাকে। ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সাহিত্য এসব বিষয় মাথায় গেঁথে যায়, যদি আপনি কল্পনা করতে পারেন, প্রশ্ন করতে পারেন, অনুভব করতে পারেন।

আর্টস শেখায় বিশ্লেষণ, যুক্তি, মানবিকতা, যা কিনা যেকোনো চাকরির জন্য ভীষণ দরকারি স্কিল।

🎯 আর্টস পড়লে কেন পড়বেন?

আর্টস শুধুই একটি একাডেমিক বিষয় না, এটি জীবনের গভীর বোঝাপড়ার একটি মাধ্যম।

  • আপনি যদি মানবিক বিষয় বুঝতে পছন্দ করেন,

  • যদি লেখালেখি, বক্তৃতা, গবেষণা ভালো লাগে,

  • আর যদি সমাজ, সংস্কৃতি, ইতিহাসে আগ্রহ থাকে,

তাহলে আর্টস আপনার জন্য পারফেক্ট।

সায়েন্স যেখানে যুক্তির খেলা, আর্টস সেখানে অনুভবের। কমার্স যেখানে সংখ্যার খেলা, আর্টস সেখানে জীবনের গল্প।

💼 আর্টস নিয়ে পড়লে কী চাকরি পাওয়া যায়?

হ্যাঁ, এটা অনেকের মাথায় থাকা সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

আর্টস পড়া মানে চাকরি নেই এই ভুল ধারণা এখন বাতিল করার সময় এসেছে। নিচে কিছু সম্ভাবনাময় পেশার কথা বলি:

🏢 পেশা📋 বিবরণ
বিসিএস/সরকারি চাকরিপ্রশাসন, শিক্ষা, পুলিশ, পররাষ্ট্র ক্যাডার—সবখানেই আর্টস ব্যাকগ্রাউন্ডে থাকা ছাত্র-ছাত্রীরা আছেন।
শিক্ষকতাস্কুল-কলেজের শিক্ষক হওয়া যায় ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, বাংলা, ইংরেজি ইত্যাদি বিষয়ে।
সাংবাদিকতাভালো বিশ্লেষণ ও লেখার দক্ষতা থাকলে আপনি হতে পারেন টিভি/পত্রিকার সাংবাদিক।
এনজিও/ডেভেলপমেন্ট সেক্টরমানবিক চিন্তা, সমাজ বোঝার দক্ষতা কাজে লাগে এই সেক্টরে।
কনটেন্ট রাইটিং/ব্লগিংযাদের লিখতে ভালো লাগে, তারা অনলাইনেই গড়ে তুলতে পারেন ক্যারিয়ার।
সিভিল সার্ভিস (UN, Embassy)আন্তর্জাতিক সংগঠনেও আর্টস পড়ুয়াদের চাহিদা থাকে।
গবেষণা ও পলিসি অ্যানালাইসিসThink Tank, NGO বা Government Project-এর জন্য।

আর্টস পড়া মানেই- কমিউনিকেশন স্কিল, ক্রিটিকাল থিংকিং, এনালাইসিস, সোশ্যাল সেনসিটিভিটি এই সব স্কিলগুলো তৈরি হওয়া। আর এগুলোই তো চাকরির বাজারে বড় পুঁজি।

🤔 আর্টস নেওয়ার আগে আমি কী ভাবতাম?

ছোটবেলায় ভাবতাম- আর্টস মানে যারা “অবশিষ্ট” থাকে তাদের জায়গা।
ভাবতাম, “ভালো রেজাল্ট করি না তাই আর্টস নিতে হবে।”
ভাবতাম, “ভবিষ্যতে হয়তো টিচার হওয়া ছাড়া কিছু হবে না।”

কিন্তু বাস্তবতা বলছে, আজকের সমাজে আর্টস স্টুডেন্টরাই সবচেয়ে বেশি ভ্যালু তৈরি করতে পারে। কারণ আমরা সমাজ, সংস্কৃতি, যোগাযোগ, মানবিকতা এই মূল জায়গাগুলোতে কাজ করি।

🌟 শেষ কথায় বলি…

আজ আমি একজন আর্টস ব্যাকগ্রাউন্ডের ছাত্র হিসেবে গর্ব করি। জীবনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছি, আমার ভাষা, বিশ্লেষণ ক্ষমতা, এবং মানুষের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার দক্ষতা। এসবই তৈরি হয়েছে আর্টস পড়েই।

তাই তুমি যদি ভাবো—“আর্টস নিয়ে পড়লে কি হওয়া যায়?”
আমি বলবো, তুমি হয়ে উঠতে পারো সমাজের চোখ, কণ্ঠস্বর, দিশারী।

সঠিকভাবে পরিকল্পনা করে, মন দিয়ে পড়লে আর্টস দিয়েই তুমি অনেক দূর যেতে পারো।
কারণ প্রতিটা মানুষের গল্পের পেছনে একটা আর্ট থাকে—তুমি সেই শিল্পী।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *