কম সুদে এনজিও লোন এর কথা ভাবছেন? বাংলাদেশে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, কৃষক, নারী ও নিম্ন এবং মধ্য আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য এনজিও লোন একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সহায়তার উৎস। বিশেষ করে কম সুদে এনজিও লোন গ্রামীণ ও শহুরে জনগোষ্ঠীকে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করে থাকে। এই আর্টিকেলে আমরা কম সুদে এনজিও লোনের প্রকার, প্রদানকারী, সুদের হার, যোগ্যতা, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, পদ্ধতি এবং সুবিধা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাহলে দেরি কেন আর্টিকেলটি শুরু করা যাক। প্রথমেই আমরা জানবো এনজিও লোন কত প্রকার এ সম্পর্কে। 

এনজিও লোন কত প্রকার?

এনজিও লোন বিভিন্ন প্রয়োজনের জন্য বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। সাধারণত কয়েকটি ক্ষেএে এনজিও লোন প্রদান করে থাকে। এসকল খাতের  মধ্যে রয়েছে:

  1. ক্ষুদ্র ঋণ (Microcredit): ছোট ব্যবসা, কৃষি, হাঁস-মুরগি পালন ও হস্তশিল্পের জন্য লোন প্রদান করা হয়। এটি সাধারণত কম পরিমাণের ঋণ ও সহজ শর্তে খুব তারাতাড়ি পাওয়া যায়।
  2. ব্যবসায়িক ঋণ: ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসার সম্প্রসারণ বা নতুন ব্যবসা শুরুর জন্য এই ঋণটি উপযুক্ত। 
  3. কৃষি ঋণ: কৃষকদের জন্য বীজ, সার, কীটনাশক বা কৃষি যন্ত্রপাতি কেনার জন্য এই বিশেষ লোনটি প্রদান করা হয়। 
  4. ব্যক্তিগত ঋণ: শিক্ষা, চিকিৎসা ও  জরুরি প্রয়োজনের জন্য এই ঋণ কাজ করে। 
  5. নারী উদ্যোক্তা ঋণ: নারীদের ব্যবসা বা আয়বর্ধক কার্যক্রমের জন্য বিশেষভাবে প্রদান করা হয়।
  6. গ্রুপ ঋণ: গ্রামীণ নারী বা পুরুষদের গ্রুপভিত্তিক ঋণ। যেখানে গ্রুপের সদস্যরা একে অপরের জন্য গ্যারান্টর হিসেবে কাজ করে। এই লোন সাধারণত পরিবারের আর্থিক সংকট মেটানো ও স্বচ্ছলতার জন্য উপযুক্ত। 

কম সুদে এনজিও লোন কারা প্রদান করে?

বাংলাদেশে বেশ কিছু এনজিও কম সুদে ঋণ প্রদান করে থাকে। উল্লেখযোগ্য কিছু প্রতিষ্ঠান হলো:

  • আশা (ASA): গ্রামীণ ও শহুরে জনগোষ্ঠীর জন্য সহজ শর্তে ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানে সুপরিচিত।
  • ব্র্যাক (BRAC): বাংলাদেশের বৃহত্তম এনজিও, যারা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, নারী এবং কৃষকদের জন্য বিভিন্ন ধরনের ঋণ প্রদান করে।
  • উদ্দীপন: কম সুদে এবং সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করে, বিশেষ করে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য।
  • প্রশিকা: ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং কৃষকদের জন্য কম সুদে ঋণ প্রদানে সহায়ক।
  • পল্লী মঙ্গল: গ্রামীণ উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ধরনের ঋণ প্রদান করে।

এছাড়া, গ্রামীণ ব্যাংক এবং অন্যান্য ক্ষুদ্র আর্থিক প্রতিষ্ঠানও কম সুদে ঋণ প্রদান করে।

কম সুদে এনজিও লোনের সুদের হার কত?

কম সুদে এনজিও লোনের সুদের হার প্রতিষ্ঠান এবং ঋণের ধরনের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। সাধারণত:

  • আশা (ASA): প্রাইমারি ও স্পেশাল লোনের জন্য সুদের হার ২৪% এবং MSME লোনের জন্য ২২%। তবে, কিছু ক্ষেত্রে সুদের হার কম হতে পারে।
  • উদ্দীপন: সুদের হার ১১% থেকে ১৯% এর মধ্যে থাকে, ঋণের ধরন ও পরিমাণের উপর নির্ভর করে।
  • প্রশিকা: ১ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকার ঋণের জন্য ২৪%, ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকার জন্য ২২%, এবং ১০ লাখ টাকার উপরে ২০%।
  • ব্র্যাক: সাধারণত ১৫% থেকে ২০% এর মধ্যে, তবে বিশেষ প্রকল্পে আরও কম হতে পারে।
  • পল্লী মঙ্গল: সুদের হার পরিবর্তনশীল, তবে ব্যাংকের তুলনায় কম হতে পারে।

(বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই তথ্য দ্রত সময়ে পরিবর্তনশীল, সেহেতু এনজিও এর ওয়েবসাইট বা শাখায় গিয়ে যোগাযোগ করুন)

এছাড়া, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী কিছু এনজিও প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ১৪% বা তার কম সুদে ঋণ প্রদান করে।

আরও জানতে পারেনঃ  লক্ষ টাকা লোন নিতে চাই ? তাহলে জানুন

কম সুদে এনজিও লোনের যোগ্যতা

কম সুদে এনজিও লোন পাওয়ার জন্য কিছু সাধারণ যোগ্যতা পূরণ করতে হয়। এগুলো প্রতিষ্ঠানভেদে কিছুটা ভিন্ন হতে পারে, তবে সাধারণ শর্তগুলো হলো:

  • বয়স: ঋণগ্রহীতার বয়স সাধারণত ১৮ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে হতে হবে।
  • নাগরিকত্ব: বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক হতে হবে।
  • সঞ্চয় হিসাব: বেশিরভাগ এনজিওর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে একটি সঞ্চয় হিসাব থাকতে হবে।
  • আয়ের উৎস: নির্দিষ্ট আয়বর্ধক কার্যক্রম বা ব্যবসার প্রমাণ থাকতে হবে।
  • গ্রুপ সদস্যতা: কিছু ক্ষেত্রে গ্রুপভিত্তিক ঋণের জন্য গ্রুপের সদস্য হতে হবে।
  • বিশেষ অগ্রাধিকার: নারী উদ্যোক্তা, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তি বা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা অগ্রাধিকার পেতে পারেন।

কম সুদে এনজিও লোনের কাগজপত্র

এনজিও লোনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাধারণত সহজ এবং সরল হয়। সাধারণ কাগজপত্রের তালিকা নিম্নরূপ:

  • জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি: ঋণগ্রহীতা এবং জামিনদারের (যদি প্রয়োজন হয়)।
  • পাসপোর্ট সাইজের ছবি: ঋণগ্রহীতা এবং জামিনদারের।
  • আবেদন ফরম: সংশ্লিষ্ট এনজিওর প্রদত্ত ফরম পূরণ করতে হবে।
  • ব্যবসার কাগজপত্র: ব্যবসায়িক ঋণের ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স বা ব্যবসার প্রমাণ।
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট: গত ৬ মাস বা ১ বছরের ব্যাংক হিসাবের বিবরণী (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।
  • অন্যান্য: কিছু ক্ষেত্রে আয়কর সনদ, ভিসার কপি (প্রবাসীদের জন্য), বা অন্যান্য প্রমাণপত্র।

কম সুদে এনজিও লোনের পদ্ধতি

এনজিও লোন পাওয়ার পদ্ধতি সাধারণত সহজ এবং দ্রুত হয়। সাধারণ পদ্ধতি নিম্নরূপ:

  1. শাখায় যোগাযোগ: নিকটস্থ এনজিও শাখায় যোগাযোগ করতে হবে।
  2. আবেদন ফরম সংগ্রহ: এনজিওর প্রদত্ত আবেদন ফরম সংগ্রহ করে সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে।
  3. কাগজপত্র জমা: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ আবেদন ফরম জমা দিতে হবে।
  4. যাচাই-বাছাই: এনজিও কর্তৃপক্ষ আবেদনকারীর তথ্য এবং কাগজপত্র যাচাই করে।
  5. সাক্ষাৎকার (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে): কিছু ক্ষেত্রে আবেদনকারীর সাথে সাক্ষাৎকার নেওয়া হতে পারে।
  6. ঋণ অনুমোদন ও বিতরণ: যোগ্যতা থাকলে ঋণ অনুমোদন করা হয় এবং টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয়।

প্রক্রিয়াটি সাধারণত ৭ থেকে ২০ কর্মদিবসের মধ্যে সম্পন্ন হয়।

কম সুদে এনজিও লোনের সুবিধা

কম সুদে এনজিও লোনের বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে, যা এটিকে জনপ্রিয় করে তুলেছে:

  • সহজ প্রক্রিয়া: ঋণ পাওয়ার প্রক্রিয়া সরল এবং দ্রুত।
  • কম সুদের হার: ব্যাংকের তুলনায় সুদের হার তুলনামূলক কম এবং লুকানো চার্জ নেই।
  • জামানতের প্রয়োজন নেই: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জামানত ছাড়াই ঋণ পাওয়া যায়।
  • সহজ কিস্তি: নমনীয় কিস্তির মাধ্যমে ঋণ পরিশোধ করা যায়, যেমন সাপ্তাহিক বা মাসিক।
  • নারী ক্ষমতায়ন: নারীদের জন্য বিশেষ ঋণ প্রকল্প এবং অগ্রাধিকার।
  • দ্রুত ঋণ প্রদান: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঠিক থাকলে ১২-২৪ ঘণ্টার মধ্যেও ঋণ পাওয়া সম্ভব।
  • আর্থিক অন্তর্ভুক্তি: গ্রামীণ ও নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীকে আর্থিক সেবার আওতায় আনা।

শেষ কথা

কম সুদে এনজিও লোন বাংলাদেশের দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য একটি কার্যকর আর্থিক সমাধান। আশা, ব্র্যাক, উদ্দীপন, প্রশিকা, পল্লী মঙ্গলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো সহজ শর্তে এবং কম সুদে ঋণ প্রদান করে জনগণের জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তবে, ঋণ নেওয়ার আগে সুদের হার, শর্তাবলী এবং পুনঃপরিশোধের সময়সীমা ভালোভাবে বিবেচনা করা উচিত। সঠিক পরিকল্পনা এবং ঋণের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করলে এটি আর্থিক স্বাবলম্বিতা অর্জনে সহায়ক হবে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *