বর্তমান সময়ে থাইল্যান্ড দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি জনপ্রিয় গন্তব্যের স্থান। থাইল্যান্ডে প্রতি বছর লাখো মানুষ ভ্রমণ, কাজ এবং ব্যবসার উদ্দেশ্যে যান। বর্তমান সময়ে বিশেষ করে বাংলাদেশী নাগরিকদের মধ্যে থাইল্যান্ড কাজের ভিসা নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে। এই আর্টিকেলে আমরা থাইল্যান্ডে কাজের ভিসা সম্পর্কিত সকল তথ্য সহজে তুলে ধরব। যাতে আপনি সহজেই বুঝতে পারেন এবং আপনার পরিকল্পনা সঠিকভাবে করতে পারেন।

থাইল্যান্ড কাজের ভিসা কী?

থাইল্যান্ড কাজের ভিসা হলো এমন একটি ভিসা, যা বিদেশি নাগরিকদের থাইল্যান্ডে বৈধভাবে কাজ করার অনুমতি দেয়। এটি সাধারণত নন-ইমিগ্রান্ট বি ভিসা (Non-Immigrant B Visa) নামে পরিচিত। এই ভিসা পাওয়ার পর আপনাকে একটি ওয়ার্ক পারমিট নিতে হবে। যা আপনাকে থাইল্যান্ডে নির্দিষ্ট চাকরি করার অনুমতি দেবে। এই ভিসা বিভিন্ন পেশার জন্য প্রযোজ্য হয়ে থাকে। যেমন- শিক্ষকতা, গার্মেন্টস, কনস্ট্রাকশন, আইটি ও  অন্যান্য শিল্প।

থাইল্যান্ডের কাজের ভিসা কীভাবে পাওয়া যায়?

থাইল্যান্ডে কাজের ভিসা পাওয়ার জন্য নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে:

  1. চাকরির প্রস্তাব গ্রহণ: প্রথমে থাইল্যান্ডের কোনো নিয়োগকর্তার কাছ থেকে চাকরির প্রস্তাব (Job Offer) পেতে হবে। নিয়োগকর্তার উচিত আপনার জন্য ভিসা আবেদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরবরাহ করা।
  2. নন-ইমিগ্রান্ট বি ভিসার জন্য আবেদন: আপনি বাংলাদেশে থাইল্যান্ড দূতাবাসে বা অনলাইনে ই-ভিসা পোর্টালের মাধ্যমে আবেদন করতে পারেন। আবেদনের সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে, যেমন:
    • বৈধ পাসপোর্ট (কমপক্ষে ৬ মাস মেয়াদ থাকতে হবে)।
    • নিয়োগকর্তার চিঠি ও চাকরির চুক্তিপত্র।
    • শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ।
    • সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজের ছবি। ছবি কত কপি প্রয়োজন হবে সেটি নির্ভর করে চাহিদার উপর। তবে আপনি ২ কপি থেকে ৬ কপি করে কাছে রাখবেন। 
    • ব্যাংক স্টেটমেন্ট (আর্থিক সামর্থ্য প্রমাণের জন্য)। গত ৬ মাস থেকে ১২ মাসের স্টেটমেন্ট। 
  3. ভিসা অনুমোদন: আবেদন জমা দেওয়ার পর থাই দূতাবাস আপনার আবেদন যাচাই করবে। সাধারণত ৭-১০ কার্যদিবস সময় লাগতে পারে।
  4. ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন: থাইল্যান্ডে পৌঁছানোর পর আপনাকে ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করতে হবে। এটি থাইল্যান্ডের শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে ইস্যু করে প্রদান করা হয়। 

থাইল্যান্ড কাজের ভিসা খরচ

থাইল্যান্ড কাজের ভিসা খরচ নির্ভর করে ভিসার ধরন এবং আবেদন প্রক্রিয়ার উপর। সাধারণত, নন-ইমিগ্রান্ট বি ভিসার জন্য খরচ হতে পারে:

  • ভিসা ফি: সিঙ্গেল এন্ট্রি ভিসার জন্য প্রায় ২,০০০ থাই বাত (প্রায় ৭,০০০ টাকা) এবং মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসার জন্য ৫,০০০ থাই বাত (প্রায় ১৭,০০০ টাকা)।
  • ওয়ার্ক পারমিট ফি: ওয়ার্ক পারমিটের জন্য ১,০০০ থেকে ৩,০০০ থাই বাত খরচ হতে পারে।
  • অন্যান্য খরচ: এজেন্সি ফি (যদি এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করেন), নথিপএ ও ভ্রমণ খরচ ইত্যাদি খরচ মিলিয়ে মোট খরচ ১০,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকার মধ্যে হতে পারে।

সাম্প্রতিক আপডেট তথ্যের জন্য থাইল্যান্ড দূতাবাসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট চেক করুন।

থাইল্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট ভিসা

থাইল্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট ভিসা বলতে বোঝায় নন-ইমিগ্রান্ট বি ভিসার সাথে ওয়ার্ক পারমিট। যা আপনাকে থাইল্যান্ডে বৈধভাবে কাজ করার অনুমতি দেয়। এটি পেতে হলে:

  • আপনার নিয়োগকর্তাকে অবশ্যই থাইল্যান্ডের শ্রম মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হবে।
  • প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের মধ্যে রয়েছে চাকরির চুক্তি, শিক্ষাগত সনদ এবং স্বাস্থ্য সার্টিফিকেট।
  • ওয়ার্ক পারমিট সাধারণত ১ বছরের জন্য ইস্যু করা হয় এবং নবায়ন করা যায়।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: ওয়ার্ক পারমিট ছাড়া থাইল্যান্ডে কাজ করা বেআইনি এবং এর জন্য জরিমানা বা দেশ থেকে বহিষ্কারের ঝুঁকি রয়েছে। সেহেতু বৈধ্য ভাবে বিদেশে যান কাজ করতে। 

থাইল্যান্ড ই-ভিসার দাম কত?

থাইল্যান্ড সরকার সম্প্রতি ই-ভিসা সিস্টেম চালু করেছে। যা বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য ভিসা আবেদন প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করেছে। থাইল্যান্ড ই-ভিসার দাম নির্ভর করে ভিসার ধরনের উপর। উদাহরণস্বরূপ:

  • টুরিস্ট ই-ভিসা: প্রায় ৩,০০০ টাকা (ভিএফএস ফি এবং ট্যাক্স সহ)।
  • নন-ইমিগ্রান্ট বি ই-ভিসা: ৭,০০০ থেকে ১৭,০০০ টাকা।

ই-ভিসা আবেদনের জন্য থাইল্যান্ডের অফিসিয়াল ই-ভিসা পোর্টালে (www.thaievisa.go.th) আবেদন করতে হবে। আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে ভিসা ইমেইলের মাধ্যমে পাওয়া যায়, যা প্রিন্ট করে ইমিগ্রেশনে দেখাতে হয়।

থাইল্যান্ড যেতে কত বছর বয়স লাগে?

থাইল্যান্ডে কাজের ভিসার জন্য নির্দিষ্ট বয়সের শর্ত নির্ভর করে চাকরির ধরন এবং নিয়োগকর্তার প্রয়োজনীয়তার উপর। তবে, সাধারণত:

  • ন্যূনতম বয়স: ২০ বছর।
  • উচ্চ দক্ষতার পেশা: কিছু ক্ষেত্রে, যেমন আইটি বা শিক্ষকতা, ২৫ বছর বা তার বেশি বয়সের প্রার্থীদের প্রাধান্য দেওয়া হয়।
  • দীর্ঘমেয়াদী ভিসা: ১০ বছর মেয়াদী ভিসার জন্য (যেমন ধনাঢ্য ব্যক্তি বা অবসরপ্রাপ্তদের জন্য), ন্যূনতম ৫০ বছর বয়স প্রয়োজন হতে পারে।

নির্দিষ্ট চাকরির জন্য নিয়োগকর্তার শর্তাবলী ভালোভাবে যাচাই করে নিন।

থাইল্যান্ডে কাজের বেতন কত?

থাইল্যান্ডে কাজের বেতন কাজের ধরন, দক্ষতা, এবং অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে। এখানে কিছু জনপ্রিয় পেশার গড় বেতনের ধারণা দেওয়া হলো:

  • গার্মেন্টস শ্রমিক: মাসিক ১০,০০০ থেকে ১৫,০০০ থাই বাত (প্রায় ৩৫,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা)।
  • কনস্ট্রাকশন শ্রমিক: মাসিক ১২,০০০ থেকে ২০,০০০ থাই বাত (প্রায় ৪০,০০০ থেকে ৬৫,০০০ টাকা)।
  • শিক্ষকতা (ইংরেজি শিক্ষক): মাসিক ৩০,০০০ থেকে ৫০,০০০ থাই বাত (প্রায় ১,০০,০০০ থেকে ১,৫০,০০০ টাকা)।
  • আইটি পেশাজীবী: মাসিক ৫০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ থাই বাত (প্রায় ১,৫০,০০০ থেকে ৩,০০,০০০ টাকা)।

বেতনের পরিমাণ নিয়োগকর্তা এবং অঞ্চলের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। ব্যাংককের মতো বড় শহরে বেতন সাধারণত বেশি হয়।

বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ড ভিসা খরচ

বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ড কাজের ভিসা পেতে মোট খরচ নির্ভর করে কয়েকটি বিষয়ের উপর, যেমন:

  • ভিসা ফি: ৭,০০০ থেকে ১৭,০০০ টাকা।
  • এজেন্সি ফি: এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করলে ৫,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা অতিরিক্ত লাগতে পারে।
  • অন্যান্য খরচ: পাসপোর্ট, নথি অনুবাদ, এবং ভ্রমণ খরচ মিলিয়ে মোট ২০,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকা হতে পারে।
  • এয়ার টিকেট: ঢাকা থেকে ব্যাংকক রিটার্ন টিকেটের দাম ২৫,০০০ থেকে ৪০,০০০ টাকা।

এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করলে প্রক্রিয়া সহজ হলেও খরচ বাড়তে পারে। তাই নিজে আবেদন করার চেষ্টা করুন, যদি সম্ভব হয়।

থাইল্যান্ড গার্মেন্টস ভিসা

থাইল্যান্ড গার্মেন্টস ভিসা বলতে সাধারণত নন-ইমিগ্রান্ট বি ভিসার অধীনে গার্মেন্টস শিল্পে কাজের জন্য ইস্যু করা ভিসাকে বোঝায়। থাইল্যান্ডের গার্মেন্টস শিল্পে বাংলাদেশী শ্রমিকদের চাহিদা রয়েছে, বিশেষ করে টেক্সটাইল এবং পোশাক কারখানায়। এই ভিসা পেতে হলে:

  • চাকরির প্রস্তাব: গার্মেন্টস কারখানা থেকে চাকরির চুক্তিপত্র প্রয়োজন।
  • প্রয়োজনীয় কাগজপত্র: পাসপোর্ট, শিক্ষাগত সনদ, অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট (যদি থাকে), এবং স্বাস্থ্য সার্টিফিকেট।
  • বেতন: গার্মেন্টস শ্রমিকদের গড় বেতন মাসিক ১০,০০০ থেকে ১৫,০০০ থাই বাত।

গার্মেন্টস ভিসার জন্য আবেদন প্রক্রিয়া অন্যান্য কাজের ভিসার মতোই। তবে, নির্ভরযোগ্য নিয়োগকর্তা বেছে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

আরও জানতে পারেনঃ আশা এনজিও লোন পদ্ধতি ২০২৫ 

FAQ

থাইল্যান্ড কাজের ভিসা পেতে কত দিন লাগে?

উত্তর: সাধারণত ৭-১০ কার্যদিবস লাগে। তবে ই-ভিসার ক্ষেত্রে ১০ দিনের মধ্যে ভিসা ইস্যু হতে পারে।

বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য কি টুরিস্ট ভিসায় কাজ করা যায়?

না, টুরিস্ট ভিসায় কাজ করা বেআইনি। কাজের জন্য নন-ইমিগ্রান্ট বি ভিসা এবং ওয়ার্ক পারমিট প্রয়োজন।

গার্মেন্টস ভিসার জন্য কি অভিজ্ঞতা লাগে?

অভিজ্ঞতা থাকলে ভালো, তবে কিছু কারখানা প্রশিক্ষণ প্রদান করে। নিয়োগকর্তার শর্তাবলী যাচাই করুন।

ভিসা রিজেক্ট হলে কী করব?

রিজেকশনের কারণ জানুন এবং সমস্যা সমাধান করে পুনরায় আবেদন করুন।

শেষ কথা

থাইল্যান্ডে কাজের সুযোগ বাংলাদেশীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় সম্ভাবনা। থাইল্যান্ড কাজের ভিসা পাওয়ার জন্য সঠিক তথ্য এবং প্রস্তুতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই গাইডে আমরা ভিসা প্রক্রিয়া, খরচ, বেতন, এবং গার্মেন্টস ভিসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আপনার পরিকল্পনা সফল করতে থাইল্যান্ড দূতাবাসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এবং নির্ভরযোগ্য এজেন্সির সাহায্য নিন। আপনার যাত্রা শুভ হোক!

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *