পড়াশোনার চাপ, রাতজাগা পড়া আর মনের ভেতরে চাপা টেনশন – পরীক্ষার সময়টা কেবল পড়াশোনারই নয়, অনুভূতিরও। এ সময় আমরা যাদের সবচেয়ে বেশি মিস করি, তাঁদের একজন হলেন আমাদের বাবা। আর তাই, অনেক সময় চিঠি হয়ে ওঠে সেই অনুভূতিগুলোর সবচেয়ে আন্তরিক বহিঃপ্রকাশ।
তবে প্রশ্ন হচ্ছে – বাবার কাছে পরীক্ষার প্রস্তুতি জানিয়ে চিঠি কীভাবে লিখব? যেন সেটা কেবল একটা বার্তা না হয়ে ওঠে, বরং ভালোবাসা, শ্রদ্ধা আর আশ্বাসে ভরা একটি আবেগঘন চিঠি। আজকে সেই পথটাই একসাথে খুঁজে নিই।
📌 কেন লিখব বাবাকে চিঠি?
চিঠি লেখা অনেকের কাছে পুরনো ধারণা মনে হতে পারে, কিন্তু বিশ্বাস করুন – পরীক্ষার প্রস্তুতির কথা বাবাকে জানিয়ে লেখা একটি চিঠি আমাদের ভিতরের কথাগুলো গুছিয়ে নিতে সাহায্য করে। এটা বাবার মনেও আশ্বাস তৈরি করে যে, হ্যাঁ, তাঁর সন্তান পথেই আছে।
একজন ছাত্র হিসেবে আমার অভিজ্ঞতা বলছে – চিঠির শব্দে অনুভব জুড়ে থাকলে, সেটা মনের অনেক চাপও হালকা করে।
✍️ চিঠি লেখার শুরু – সম্ভাষণ ও পরিচিতি
চিঠির শুরুতেই থাকা উচিত সম্মান ও ভালোবাসার ছোঁয়া।
উদাহরণ:শ্রদ্ধেয় আব্বাজান,
আশা করি আপনি আল্লাহর রহমতে সুস্থ ও ভালো আছেন। আমিও এখানে ভালো আছি, আপনার দোয়ার বরকতে।
এভাবে শুরু করলে চিঠির ভাষা পায় একটা উষ্ণতা, যা বাবার মনেও পৌঁছে যায় সহজে।
📚 মূল অংশে কী লিখব? – পরীক্ষার প্রস্তুতির অগ্রগতি
এখানে আপনি আপনার বাস্তব পড়াশোনার রুটিন ও প্রস্তুতির কথা সোজা ভাষায় জানাতে পারেন। নিচে কিছু উদাহরণ দিচ্ছি যেগুলো আপনি প্রয়োগ করতে পারেন:
“আমি এখন প্রতিদিন একটা রুটিন মেনে পড়ছি। সকালে গণিত, দুপুরে বাংলা-ইংরেজি আর রাতে বিজ্ঞান ও ইতিহাস নিয়ে বসি।”
“আমার দুর্বল বিষয় ছিল গণিত, তাই সেটাতে এখন বেশি সময় দিচ্ছি।”
“প্র্যাকটিস সেট ও মক টেস্ট দিচ্ছি নিয়মিত – এতে করে অনেক আত্মবিশ্বাস পাচ্ছি।”
“পরীক্ষার ভয় কমে এসেছে। এখন নিজেকে অনেক গুছানো মনে হচ্ছে।”
এই অংশে আপনি চাইলে কিছু অনুভূতিও যুক্ত করতে পারেন:
“পরীক্ষা যতই কাছে আসছে, একটু একটু করে টেনশন বাড়ছে, কিন্তু আপনার কথা মনে পড়লে সাহস পাই।”
“আমি চেষ্টা করছি প্রতিদিন নিজেকে একটু ভালো করার – যেন আপনার গর্বের কারণ হতে পারি।”
💌 আবেগ ও শ্রদ্ধার কথা – বাবার প্রতি ভালোবাসা
চিঠির ভাষা শুধু তথ্য দেয় না, দেয় অনুভূতির প্রকাশ। তাই বাবার প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর কৃতজ্ঞতাও জানান চিঠির মাঝেই।
কিছু দারুণ বাক্য ব্যবহার করতে পারেন:
“আপনার উপদেশ আর দোয়া আমার জীবনের বড় শক্তি।”
“আপনার মুখে হাসি ফোটাতে চাই, আর সেজন্যই এত মন দিয়ে পড়ছি।”
“বাবা মানেই আমার কাছে ছায়ার মতো নির্ভরতা। আপনি পাশে থাকলেই আমি সব পারি মনে হয়।”
✅ চিঠির উপসংহার – ছোট্ট কিন্তু অর্থবহ
উপসংহারে লিখতে পারেন:
“মা ও তমাকে আমার সালাম ও আদর জানাবেন।
আপনি কবে আসবেন জানালে ভালো লাগবে।
আপনার আশীর্বাদ যেন সব সময় আমার সঙ্গে থাকে, এই দোয়া চাই।”
বিদায় সম্ভাষণ:
আপনার স্নেহের,
নাফিস (আপনার নাম)
📅 তারিখ: ১৫ এপ্রিল ২০২৫
🏠 ঠিকানা: বাসা নম্বর-১২/এ, রোড-৫, ধানমন্ডি, ঢাকা।
পরীক্ষার প্রস্তুতি জানিয়ে বাবার কাছে নমুনা চিঠি
[তারিখ]
শ্রদ্ধেয় বাবা,
আমার সালাম নিবেন। আশা করি আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি।
বাবা, আমার বার্ষিক পরীক্ষা খুব কাছেই। তাই এখন আমি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে খুবই ব্যস্ত সময় পার করছি। আমার পড়ালেখা প্রায় শেষের দিকে, এখন শুধু নিয়মিতভাবে বিষয়গুলোRevision করছি। প্রতিটি বিষয় মনোযোগের সাথে দেখছি এবং যেখানে প্রয়োজন, শিক্ষকের সাহায্য নিচ্ছি।
শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য আমি পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিচ্ছি এবং নিয়ম মেনে খাবার খাচ্ছি। আমার বিশ্বাস, কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে আমি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে পারবো।
মা’কে আমার সালাম ও ভালোবাসা জানাবেন। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন, যেন আমি ভালোভাবে পরীক্ষা দিতে পারি।
ইতি,
আপনার স্নেহের, [আপনার নাম]