৮ম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা ২০২৫ এর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সঠিক সিলেবাস জানা। এই বছরের জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে এবং সঠিক প্রস্তুতিই সফলতার চাবিকাঠি।
৮ম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা কী এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ?
৮ম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা হলো সরকারি একটি পরীক্ষা যা মেধাবী শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করে তাদের পড়াশোনার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। এই পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করলে শিক্ষার্থীরা মাসিক বৃত্তি পায় এবং তাদের শিক্ষাজীবন আরও সহজ হয়ে ওঠে। প্রতি বছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী এই পরীক্ষায় অংশ নেয় এবং মেধার ভিত্তিতে বৃত্তি লাভ করে।
২০২৫ সালের বৃত্তি পরীক্ষার সিলেবাস – বিস্তারিত
বৃত্তি পরীক্ষা ২০২৫ সিলেবাস বাংলা
বাংলা অংশে সাধারণত তিন ধরণের প্রশ্ন থাকে।
রচনা, পত্রলেখন বা অনুচ্ছেদ লেখা – এখানে সৃজনশীলতা ও ভাষার দক্ষতা যাচাই করা হয়।
ব্যাকরণ – যেমন সমাস, কারক, বিভক্তি, সমার্থক শব্দ ইত্যাদি।
উদাহরণ: “আমার প্রিয় ঋতু”, “বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ” এসব রচনার বিষয় প্রায়ই আসে।
বাংলা সিলেবাস
পাঠ্যপুস্তক: পাতাবাহার
অধ্যায় সীমা: ১–১৩৪ পৃষ্ঠা পর্যন্ত
ব্যাকরণ অংশ:
বর্ণ, শব্দ, বাক্য
পদ
এক কথায় প্রকাশ
বিপরীত শব্দ (পাঠ্যপুস্তক নির্ভর)
৮ম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা ২০২৫ ইংরেজি সিলেবাস
ইংরেজি অনেকের কাছে কঠিন মনে হয়, কিন্তু নিয়মিত চর্চা করলে সহজ হয়ে যায়।
এখানে থাকে:
Grammar: Tense, Voice, Narration, Prepositions, Articles।
Writing Skills: Paragraph, Application/Email।
Reading Comprehension: একটি অনুচ্ছেদ পড়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়।
উদাহরণ: “Your Aim in Life” অথবা “A Day in Your School” রচনাগুলো প্রায়ই দেখা যায়।
ইংরেজি সিলেবাস
পাঠ্যপুস্তক ১: BUTTERFLY
অধ্যায়: Page 1–70 (Revision Lesson to Lesson 7)
পাঠ্যপুস্তক ২: Primary English IV (PEDB)
Page 21–31
Page 30–42
৮ম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা ২০২৫ সিলেবাস গণিত
গণিত অংশ তুলনামূলক বেশি নম্বর বহন করে।
এখানে যা থাকবে:
অঙ্ক: ভগ্নাংশ, শতকরা,লাভ-ক্ষতি।
জ্যামিতি: ত্রিভুজ, ক্ষেত্রফল।
বীজগণিত: সমীকরণ সমাধান।
ব্যবহারিক অঙ্ক: দৈনন্দিন জীবনের সমস্যা সমাধান।
আমার অভিজ্ঞতা হলো, প্রতিদিন অল্প হলেও অঙ্ক অনুশীলন করলে পরীক্ষার হলে মাথা গুলিয়ে যায় না।
গণিত সিলেবাস
অধ্যায় সীমা: ১–১৪ পৃষ্ঠা পর্যন্ত (সম্পূর্ণ পাঠ্যবই)
৮ম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা ২০২৫ সিলেবাস বিজ্ঞান
বিজ্ঞান অংশে প্রাথমিক জ্ঞান যাচাই করা হয়।
পদার্থবিজ্ঞান: আলো, শব্দ, বল ও গতি।
রসায়ন: মৌল, যৌগ, দ্রবণ।
জীববিজ্ঞান: উদ্ভিদ, মানবদেহ।
প্রয়োগিক বিজ্ঞান: দৈনন্দিন জীবনের ব্যবহার।
উদাহরণ: “গাছ আমাদের কীভাবে অক্সিজেন দেয়?” – এই ধরনের সহজ প্রশ্ন থাকে।
বিজ্ঞান সিলেবাস
পাঠ্যপুস্তক: আমাদের পরিবেশ
অধ্যায় সীমা:
পৃষ্ঠা ১–৫০
পৃষ্ঠা ৯২–৯৯
পূর্ণমান: ৫০
৮ম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা ২০২৫ সিলেবাস বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়
এই বিষয়টি অনেকেই অবহেলা করে, অথচ সহজে নম্বর তোলার সুযোগ এখানে বেশি।
ভূগোল: নদ-নদী, জলবায়ু, কৃষি।
ইতিহাস: স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ, ঐতিহাসিক স্থান।
নাগরিক শিক্ষা: নৈতিকতা, দায়িত্ব, অধিকার।
ছোট ছোট টপিক মুখস্থ করার পরিবর্তে বুঝে পড়া বেশি কাজে দেয়।
সমাজ বিজ্ঞান সিলেবাস
পাঠ্যপুস্তক: আমাদের পরিবেশ
অধ্যায় সীমা:
পৃষ্ঠা ৫০–৯১
পূর্ণমান: ১০০
দাখিল ৮ম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা সিলেবাস ২০২৫
দাখিল স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা বৃত্তি পরীক্ষার সিলেবাস নির্ধারণ করা হয়েছে। এই সিলেবাসে ধর্মীয় ও সাধারণ শিক্ষার সমন্বয় করা হয়েছে, যাতে শিক্ষার্থীরা ধর্মীয় জ্ঞান ও আধুনিক শিক্ষার মধ্যে ভারসাম্য রাখতে পারে। পরীক্ষা মোট ৬ (ছয়) টি বিষয়ে অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি বিষয়েই পূর্ণ নম্বর থাকবে ১০০, অর্থাৎ সর্বমোট ৬০০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হবে।
বিষয়ভিত্তিক দাখিল বৃত্তি পরীক্ষার সিলেবাস
কুরআন মাজিদ এবং আকাইদ ও ফিকহ – ১০০ নম্বর
কুরআন তিলাওয়াত ও অর্থ বোঝা
আকাইদ সম্পর্কিত মৌলিক বিষয়
এই অংশে শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় জ্ঞান যাচাই করা হবে।
আরবি (১ম ও ২য় পত্র) – ১০০ নম্বর
আরবি ভাষার ব্যাকরণ
কুরআন–হাদিস ভিত্তিক অনুশীলনী
আরবি পড়াশোনায় নিয়মিত অনুশীলন করলে এই অংশে ভালো করা যায়।
দাখিল শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ সিলেবাস
দাখিল ৮ম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা ২০২৫ এর জন্য আলাদা সিলেবাস রয়েছে। এই পরীক্ষা মোট ৬টি বিষয়ে অনুষ্ঠিত হবে এবং প্রতিটি বিষয়ে ১০০ নম্বর করে মোট ৬০০ নম্বরের পরীক্ষা হবে।
কুরআন মাজিদ এবং আকাইদ ও ফিকহ বিষয়ে কুরআন তিলাওয়াত ও অর্থ, আকাইদ সম্পর্কিত মৌলিক বিষয়, ফিকহের প্রয়োজনীয় নিয়মকানুন থাকবে। আরবি (১ম ও ২য় পত্র) বিষয়ে আরবি ভাষার ব্যাকরণ, অনুবাদ ও রচনা, কুরআন-হাদিস ভিত্তিক অনুশীলনী থাকবে।
পরীক্ষার তারিখ ও সময়সূচি
৮ম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা ২০২৫ ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হবে। নির্ধারিত রুটিন অনুযায়ী ২১ ডিসেম্বর বাংলা, ২২ ডিসেম্বর ইংরেজি, ২৩ ডিসেম্বর গণিত, এবং ২৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এবং বিজ্ঞান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রতিটি পরীক্ষার সময়সীমা ৩ ঘণ্টা এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পরীক্ষার্থীরা অতিরিক্ত ৩০ মিনিট সময় পাবেন।
মানবন্টন ও প্রশ্ন কাঠামো
সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য মোট ৪টি প্রধান বিষয়ে ৪০০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। বাংলা ১০০ নম্বর, ইংরেজি ১০০ নম্বর, গণিত ১০০ নম্বর এবং বিজ্ঞান ৫০ নম্বর ও বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় ৫০ নম্বর মিলে আরও ১০০ নম্বর বরাদ্দ রয়েছে।
প্রশ্নপত্রে MCQ ও লিখিত উভয় ধরনের প্রশ্ন আসবে। MCQ সাধারণ জ্ঞান যাচাই করে, আর লিখিত অংশে বিশ্লেষণী উত্তর দিতে হয়।
আবেদন প্রক্রিয়া ও যোগ্যতা
৮ম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা ২০২৫ এ অংশ নিতে হলে প্রতিটি বিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ২৫% শিক্ষার্থী (৭ম শ্রেণির সামষ্টিক মূল্যায়নের ভিত্তিতে) পরীক্ষায় বসার সুযোগ পাবে। আবেদন করতে হবে বিদ্যালয়ের মাধ্যমে এবং অনলাইন ফরম পূরণ করতে হবে।
পরীক্ষার্থী প্রতি বোর্ড ফি ৄ৪০০ টাকা এবং কেন্দ্র ফি ২০০ টাকা দিতে হয়। বৃত্তি তিন ধরনের – সাধারণ বৃত্তি, মেধা বৃত্তি ও দাখিল বৃত্তি।
প্রস্তুতির কার্যকর কৌশল
সফল প্রস্তুতির জন্য প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় পড়াশোনা করা জরুরি। পুরনো বছরের প্রশ্নপত্র সমাধান করলে প্রশ্নের ধরন বোঝা যায়। দুর্বল বিষয়গুলো আলাদা করে বেশি সময় দিতে হবে এবং শিক্ষকের কাছে প্রশ্ন করতে দ্বিধা করা যাবে না।
বাংলা ও ইংরেজির জন্য প্রতিদিন লেখার চর্চা করতে হবে। রচনা মুখস্থ না করে নিজের ভাষায় লিখতে চেষ্টা করতে হবে। গণিতে প্রতিদিন অংক চর্চা এবং বিজ্ঞানের চিত্রগুলো এঁকে পড়তে হবে।
সপ্তাহে একদিন মডেল টেস্ট দেওয়া এবং পরীক্ষার হলের পরিবেশে নিজেকে প্রস্তুত রাখা গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত সময় ব্যবস্থাপনা অনুশীলন করলে পরীক্ষার দিন সময়ের মধ্যে সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব হবে।
ফলাফল ও পরবর্তী পদক্ষেপ
৮ম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফল সাধারণত পরীক্ষার তিন মাসের মধ্যে প্রকাশিত হয়। শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে রোল নম্বর দিয়ে ফলাফল জানা যাবে। সফল শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পেতে থাকবে যা তাদের পড়াশোনার খরচ মেটাতে সাহায্য করবে।
৮ম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা ২০২৫ একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ যা মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত উজ্জ্বল করতে পারে। সঠিক প্রস্তুতি, নিয়মিত অনুশীলন এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে এই পরীক্ষায় অংশ নিলে সফলতা অর্জন সম্ভব।