দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা ২০২৫ নিয়ে এসেছে নতুন দিক নির্দেশনা। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের জন্য বিশেষ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। আগামী ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে শুরু হওয়া এই পরীক্ষায় নতুন প্রশ্নপত্রের কাঠামো এবং নম্বর বণ্টন ব্যবস্থা চালু হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের জন্য বিশেষ নির্দেশাবলী
গত ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের এক গুরুত্বপূর্ণ চিঠিতে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের উদ্দেশ্যে বিশেষ নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এই নির্দেশনায় বলা হয়েছে যে, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক প্রকাশিত জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষার বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নপত্রের কাঠামোসহ নম্বর বণ্টন বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।
প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের এই নির্দেশনা মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি কারণ নতুন প্রশ্ন কাঠামো অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি নিতে হবে। এই নির্দেশনা পালনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সঠিকভাবে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারবে এবং সর্বোচ্চ সাফল্য অর্জন করতে পারবে।
নতুন প্রশ্নপত্রের কাঠামো: যা জানা জরুরি
এবারের জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় মোট ৫টি বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে। প্রতিটি বিষয়ে ১০০ নম্বর করে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে এবং প্রতিটি পরীক্ষার সময়কাল হবে ৩ ঘন্টা। তবে বিজ্ঞান এবং বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয় দুটি আলাদাভাবে ৫০ নম্বর করে নেওয়া হবে, যার সময়কাল হবে ১ঘন্টা ৩০ মিনিট করে।
বাংলা বিষয়ে নম্বর বণ্টন হবে এভাবে: বহুনির্বাচনী প্রশ্নে ২০ নম্বর, সৃজনশীল প্রশ্নে ৪০ নম্বর, বর্ণনামূলক প্রশ্নে ১০ নম্বর এবং নির্মিতি অংশে ৩০ নম্বর বরাদ্দ থাকবে। এই বিভাজনে গদ্য, কবিতা এবং ব্যাকরণ অংশ থেকে সুষম প্রশ্ন থাকবে।
গণিত বিষয়ে সৃজনশীল প্রশ্নে ৫০ নম্বর, সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্নে ২০ নম্বর এবং বহুনির্বাচনী প্রশ্নে ৩০ নম্বর বরাদ্দ রয়েছে। পাটিগণিত, বীজগণিত, জ্যামিতি এবং তথ্য ও উপাত্ত থেকে সমানুপাতিক প্রশ্ন থাকবে।
বিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের বিশেষ ব্যবস্থা
বিজ্ঞান বিষয়ে বহুনির্বাচনী প্রশ্নে ১০ নম্বর, সংক্ষিপ্ত প্রশ্নে ১০ নম্বর এবং সৃজনশীল প্রশ্নে ৩০ নম্বর বরাদ্দ থাকবে। প্রতিটি অধ্যায় থেকে কমপক্ষে একটি করে প্রশ্ন রাখার নিয়ম মেনে চলা হবে। একইভাবে বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয়েও অনুরূপ নম্বর বিভাজন থাকবে।
ইংরেজি বিষয়ে তিনটি মূল অংশ থাকবে – Reading অংশে ৪০ নম্বর, Grammar অংশে ৩০ নম্বর এবং Writing অংশে ৩০ নম্বর। এই বিভাজনে কবিতা, গদ্য, ব্যাকরণ এবং রচনা সকল অংশ থেকেই প্রশ্ন থাকবে।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের করণীয়
এই নতুন পরীক্ষা পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের সাফল্যের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখতে হবে। প্রথমত, সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া বাধ্যতামূলক হওয়ায় প্রতিটি বিষয়ে সমান দক্ষতা অর্জন করতে হবে। দ্বিতীয়ত, বহুনির্বাচনী, সৃজনশীল এবং সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের জন্য আলাদা আলাদা প্রস্তুতি নিতে হবে।
অভিভাবকদের উচিত সন্তানদের নিয়মিত অধ্যয়নে উৎসাহ প্রদান করা এবং মানসিক চাপ কমানোর জন্য সহযোগিতা করা। পাশাপাশি শিক্ষকদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা এবং সন্তানের পড়াশোনার অগ্রগতি সম্পর্কে জানা জরুরি।
পরীক্ষার প্রস্তুতিতে বিশেষ টিপস
জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় ভাল ফলাফলের জন্য কয়েকটি বিশেষ কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে। প্রথমত, নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে প্রতিটি বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। বিশেষভাবে গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে বেশি সময় দিতে হবে কারণ এগুলোতে সৃজনশীল প্রশ্নের গুরুত্ব বেশি।
বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে ব্যাকরণ অংশে বিশেষ নজর দিতে হবে। নির্মিতি অংশের জন্য নিয়মিত পত্র লেখা, প্রবন্ধ রচনা এবং সারমর্ম লেখার চর্চা করতে হবে। পাশাপাশি মক টেস্টের মাধ্যমে পরীক্ষার পরিবেশে অভ্যস্ত হওয়া জরুরি।
শিক্ষা ব্যবস্থায় এই পরিবর্তনের তাৎপর্য
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের এই নতুন উদ্যোগ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই আধুনিক মূল্যায়ন পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা, যুক্তিক চিন্তাভাবনা এবং বিশ্লেষণী ক্ষমতা যাচাই করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি এই পদ্ধতি মুখস্থনির্ভর শিক্ষার পরিবর্তে দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
এই পরিবর্তনের ফলে ভবিষ্যতের শিক্ষা ব্যবস্থা আরও যুগোপযোগী এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হয়ে উঠবে। মেধাবী শিক্ষার্থীরা সঠিক দিকনির্দেশনা পাবে এবং তাদের প্রকৃত যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ পাবে।
সাফল্যের জন্য চূড়ান্ত পরামর্শ
জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা ২০২৫-এ সাফল্য অর্জনের জন্য পরিকল্পিত প্রস্তুতি অত্যন্ত জরুরি। শিক্ষার্থীদের উচিত সময় ব্যবস্থাপনায় দক্ষ হওয়া এবং প্রতিটি বিষয়ে সমান গুরুত্ব প্রদান করা। নিয়মিত পড়াশোনা, মক টেস্ট এবং দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করে তার উন্নতি সাধনই হবে সাফল্যের চাবিকাঠি।
সবশেষে, এই নতুন নির্দেশনা মেনে চলার মাধ্যমে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদানে আরও এগিয়ে যেতে পারবে। প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের সক্রিয় ভূমিকা এবং শিক্ষার্থীদের আন্তরিক প্রচেষ্টার সমন্বয়ে জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা হয়ে উঠবে আরও সুন্দর ও কার্যকর।